ইমাম আবু দাউদের হাদীস মূল্যায়ন: "সলেহ" হাদীসের ব্যাখ্যা | SalafiArchive

ইমাম আবু দাউদ (রহ.) এর চুপ থাকার তাৎপর্য | হাদীস গবেষণা

ইমাম আবু দাউদ (রহ.) এর চুপ থাকার তাৎপর্য

ইমাম আবু দাউদ (রহ.) যখন তার সুনান গ্রন্থে কোনো হাদীসের ওপর কিছু বলেন না তখন কি তা তার পক্ষ থেকে হাদীসটিকে হাসান বলার সমতুল্য? কেননা তিনি মক্কার লোকদের উদ্দেশ্যে লিখিত চিঠিতে বলেছিলেন, যার ব্যাপারে আমি চুপ থেকেছি, তা সলেহ।

➤ উত্তর:

প্রথমত: ইমাম আবু দাউদ (রহ.)এর চুপ থাকা বলতে বোঝানো হয় তিনি কোনো হাদীস সংকলনের পর সেই হাদীস সম্পর্কে কোনো মন্তব্য না করা।

দ্বিতীয়ত: ইমাম আবু দাউদ (রহ.)এর উক্তি 'যার ব্যাপারে আমি চুপ থেকেছি তা সলেহ' এই কথার ব্যাখ্যায় আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

কেউ বলেছেন, "সলেহ" বলতে তিনি হাসান বোঝাতে চেয়েছেন। আবার কেউ বলেছেন, সলেহ অর্থ শুধু মাত্র পার্শ্ব-উল্লেখযোগ্য অর্থাৎ মূল দলীল নয়। আবার অনেকে বলেন, তিনি সলেহ বলতে প্রমাণ ও আমলের উপযোগী হাদীস বোঝাতে চেয়েছেন। যদিও হাদীসটি কিছুটা দুর্বল হয় তবে তা তার শায়খ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ.) এর মতানুসারে গ্রহণযোগ্য যখন একই বিষয়ে অন্য কোনো সহিহ হাদীস না থাকে।

তবে সমস্যার বিষয় হচ্ছে ইমাম আবু দাউদ এমন অনেক হাদীস নিয়েও কিছু বলেননি যেগুলো অত্যন্ত দুর্বল এমনকি মুনকার। সেসব হাদীস না তো হাসান, না উল্লেখযোগ্য, না আমলের যোগ্য।

ফলে অধিকাংশ গবেষক আলেমদের মতে, ইমাম আবু দাউদ (রহ.) এর চুপ থাকাকে এককভাবে গ্রহণযোগ্যতা বা হাদীসের গুণমানের প্রমাণ হিসেবে ধরা সঠিক নয়। বরং প্রতিটি হাদীস আলাদাভাবে যাচাই করা দরকার।

হাফিজ ইবন হাজার আস্কালানি (রহ.) তাঁর গ্রন্থ النكت على ابن الصلاح এ (১/৪৩৮ ও পরে) এই বিষয়ে বিশ্লেষণমূলক আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি বলেন, "আবু দাউদ এমন অনেক দুর্বল রাবিদের থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন ও তাঁদের সম্পর্কে কিছু বলেননি, যেমন -ইবন লাহিয়াহ, সালেহ মাওলা আত তাওয়াম, আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আকীল, হারিস ইবনে ওয়াজিহ প্রমুখ।"

তিনি এমনসব মুনকার দুর্বল হাদীসও লিপিবদ্ধ করেছেন যেগুলো থেকে দলীল গ্রহণ করা সঠিক নয়।

কিছু হাদীসে ইসনাদ বিচ্ছিন্ন (منقطع), মুদাল্লিসদের 'আন' দিয়ে বর্ণনা বা এমন রাবির নাম রয়েছে যাদের চিহ্নিত করা যায় না অর্থাৎ মাজহুল।

তাই ইমাম আবু দাউদ (রহ.)এর চুপ থাকা কখনো হতে পারে

  1. পূর্বে তার আলোচনা হয়েছে বলে,
  2. কখনো কোনো ভুলবশত,
  3. কখনো হাদীসটির দুর্বলতা এতটাই স্পষ্ট যে মন্তব্য প্রয়োজন হয়নি,
  4. আবার কখনো ভিন্ন ভিন্ন রেওয়ায়েতের কারণে মন্তব্য এসেছে বা আসেনি।

উদাহরণ-

  1. إن تحت كل شعرة جنابة হাদীসটি এক স্থানে দুর্বল বলেছেন, আরেক স্থানে কিছু বলেননি।
  2. এক হাদীসে (ইবনে উমরের রা.ঘটনাপ্রসঙ্গ) সুনানে আবু দাউদে কিছু বলেননি, অথচ নিজ কিতাব (আত তাফাররুদ) এ বলেছেন, এটি মোহাম্মদ ইবন সাবিতের একক বর্ণনা ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ বলেছেন এটি মুনকার।

সারকথা, ইমাম আবু দাউদ (রহ.)এর চুপ থাকা সবসময় হাদীসের গুণগত মানের প্রমাণ নয়। তাই প্রতিটি হাদীসকে তার রাবিদের মানদণ্ডে বিচার করে গ্রহনযোগ্যতা নির্ধারণ করতে হবে। (আল্লাহু আ'লাম।)

Frequently Asked Questions

ইমাম আবু দাউদ (রহ.) এর "সলেহ" বলতে কী বুঝিয়েছেন?

ইমাম আবু দাউদ (রহ.) এর "সলেহ" শব্দের ব্যাখ্যায় আলেমদের তিনটি মত পাওয়া যায়: ১. হাসান হাদীস বোঝাতে ২. পার্শ্ব-উল্লেখযোগ্য কিন্তু মূল দলীল নয় ৩. আমলের উপযোগী হাদীস বোঝাতে, যদিও কিছুটা দুর্বল হোক

ইমাম আবু দাউদ কেন কিছু দুর্বল হাদীস সম্পর্কে মন্তব্য করেননি?

এর প্রধান কারণগুলো হলো: ১. পূর্বে আলোচনা হয়েছে বলে ২. ভুলবশত উল্লেখ করতে ভুলে যাওয়া ৩. হাদীসের দুর্বলতা এত স্পষ্ট যে মন্তব্য প্রয়োজন মনে করেননি ৪. ভিন্ন রেওয়ায়েতের কারণে মন্তব্য করা হয়নি

কোন কোন দুর্বল রাবি থেকে ইমাম আবু দাউদ হাদীস বর্ণনা করেছেন?

হাফিজ ইবন হাজার (রহ.) উল্লেখ করেছেন কিছু দুর্বল রাবির নাম যেমন: - ইবন লাহিয়াহ - সালেহ মাওলা আত তাওয়াম - আবদুল্লাহ ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আকীল - হারিস ইবনে ওয়াজিহ প্রমুখ

Post a Comment

আপনার কমেন্ট রিভিউ করে দেখা হবে! প্রয়োজনে SalafiArchive কর্তৃপক্ষ আপনার কমেন্ট রিমুভ করার অধিকার রাখে।

Join the conversation

Disqus shortname is missing. Consider reporting about this message to the admin of this blog. It seems you are the admin of this blog, add disqus shortname through Theme HTML editor to enable Disqus comments.

Join the conversation