জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন—দিন-সমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন
এই দশ দিন পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দিন-সমূহের অন্তর্ভুক্ত, কেননা—
এটি সম্মানিত মাস সমূহের (الأشهر الحرم) অন্তর্ভুক্ত।
এতে রয়েছে 'ওকুফে আরাফা'র দিন, যা সম্পর্কে হাদীসে এসেছে: "আল্লাহর নিকট এমন কোনো দিন নেই যা আরাফার দিনের চেয়ে উত্তম। এ দিনে আল্লাহ তা'আলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং পৃথিবীর মানুষের উপর ফেরেশতাদের সামনে গৌরব করেন। বলেন: 'দেখো আমার বান্দাদের দিকে—আলুথালু-বেহাল চেহারায়, ধূলিমলিন হয়ে,তারা দূরদূরান্ত থেকে আমার রহমতের আশায় এসেছে; তারা আমার শাস্তি দেখেনি! আর এ দিনেই জাহান্নাম থেকে সর্বাধিক সংখ্যক মানুষ মুক্তি পায়।'"
এই দিন রোযা রাখা; হজে না যাওয়া লোকদের জন্য সুন্নত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, এ (আরাফার) দিনের রোযা গত বছরের ও আগত বছরের গুনাহ মোচন করবে।"
এতে রয়েছে মুযদালিফায় রাত যাপন। এতে রয়েছে ঈদুল আযহার দিন। এতে রয়েছে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় দিন—যা হলো ইয়াওমুন নাহর (কুরবানির দিন)। হাদীসে এসেছে: "আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় দিন হল কুরবানির দিন, এরপর হল দ্বিতীয় দিন।"
এতে রয়েছে কুরবানি করা এবং তার কিছু অংশ সদকা দেওয়া।
এতে রয়েছে জামরাত (পাথর নিক্ষেপ) করা, যা হাজিদের জন্য বিশেষ আমল ও অনেক সওয়াবের কাজ।
এতে রয়েছে হাদী (কুরবানির পশু) জবেহ করা।
এতে রয়েছে মাথার চুল কাটার মাধ্যমে হালাল হওয়া।
এই দশ দিন শুরু হলে, যারা কুরবানি দিতে চান, তাদের জন্য নিজের শরীরের চুল বা নখ কাটা নিষেধ, যতক্ষণ না কুরবানি শেষ হয়।
এতে রয়েছে তোয়াফে ইফাযা এবং সাঈ করা, যা হজের মূল স্তম্ভ।
এ দিনগুলোতে আল্লাহর জিকির করা বিধেয়।
শুরু থেকে আরাফার সকাল পর্যন্ত মুক্ত (মুতলাক) তাকবীর এবং এরপর থেকে ১৩ তারিখের আসর পর্যন্ত নির্ধারিত (মুকায়্যাদ) তাকবীর করা সুন্নত।
তাকবীরের বর্ণনা: "আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।"
এই দিনগুলোই 'জানা-মানা দিনসমূহ' (الأيام المعلومات), যেমন আল্লাহ বলেন: "তারা যেন তাদের উপকারসমূহে হাজির হয় এবং নির্ধারিত দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে—আন'আম (চতুষ্পদ) জন্তু যেগুলোর রিযিক তিনি তাদের দিয়েছেন।"
(সূরা হাজ্জ: ২৮)
এ দিনগুলোই 'গণনীয় দিনসমূহ' (الأيام المعدودات)—যেমন আল্লাহ বলেন: "তোমরা গণনীয় দিনগুলোতে আল্লাহকে স্মরণ করো। এরপর কেউ যদি দু'দিনে ফিরে যায় তবে তার কোনো গুনাহ নেই, আর কেউ বিলম্ব করলেও তারও গুনাহ নেই—যে আল্লাহকে ভয় করে।" (সূরা বাকারা: ২০৩)
তাফসীরকারীগণ বলেছেন: আল্লাহ এ দিনগুলোকে শপথ করে বলেছেন: "শপথ ফজরের, এবং দশ রাতের।" (সূরা আল-ফাজর: ১-২) এখানে "দশ রাত" বলতে যুলহিজ্জার প্রথম দশদিন বোঝানো হয়েছে।
এই দশ দিনে সালাত, রোযা, সদকা, কুরবানি এবং আল্লাহর জিকির—সব ইবাদতের মূল শাখা একত্রিত হয়েছে। তাই—আল্লাহই ভালো জানেন—এই দিনগুলোই আল্লাহর কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে প্রিয় দিন।
অতএব এই সময়ে নেক আমল করতে ভুলে যেও না।
হাদীসে এসেছে: "এই দশ দিনের চেয়ে নেক আমলের জন্য আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয় আর কোনো দিন নেই।" সাহাবীগণ বললেন: হে রাসূলুল্লাহ! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও না? তিনি বললেন: "না, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও না—তবে সে ব্যক্তি ছাড়া যে নিজের জান ও মাল নিয়ে বের হলো এবং কিছুই ফিরে আনলো না।"
এই সময়ে ফরজ ইবাদতের পর সবচেয়ে উত্তম আমল হলো আল্লাহর জিকির করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "এই দশ দিনের মতো কোনো দিন নেই—যে দিনগুলো আল্লাহর কাছে এত মর্যাদাপূর্ণ ও নেক আমল এত প্রিয়। তাই এসব দিনে বেশি বেশি তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার) ও তাহমীদ (আলহামদুলিল্লাহ) বলো।"
অন্য হাদীসে এসেছে:
"আমি কি তোমাদের এমন আমলের কথা বলবো না যা তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম, যার মর্যাদা সবচেয়ে বেশি, যা তোমাদের রবের কাছে সবচেয়ে পবিত্র, যা সোনাদানা দান করার চেয়েও উত্তম, এমনকি শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করে শহীদ হওয়ার চেয়েও উত্তম?"
তারা বলল: হ্যাঁ, বলুন। তিনি বললেন: আল্লাহর জিকির করা।
Frequently Asked Questions
জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের ফজিলত কী?
জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন ইসলামে সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ দিন। কুরআন ও হাদীসে এই দিনগুলোর আমলের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে হজ্জ, আরাফা, কুরবানি, তাকবীর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত রয়েছে।
আরাফার দিনের ফজিলত কী?
আরাফার দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দিন। এ দিনে আল্লাহ বহু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং বান্দাদের নিয়ে ফেরেশতাদের সামনে গর্ব করেন।
এই দিনগুলোতে কোন ইবাদতগুলো করা উচিৎ?
এই দশ দিনে বেশি বেশি সালাত, রোযা, আল্লাহর জিকির, সদকা, কুরবানি এবং নেক আমল করা সুন্নত। আরাফার দিনে রোযা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।
এই দশ দিনের মধ্যে কোন দিনটি সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ?
ইসলামী দৃষ্টিতে কুরবানির দিন (ইয়াওমুন নাহর) আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় দিন। এরপর আসে ঈদের পরের দিন।