ইসলামে সুদের বিধান এবং সুদের অর্থ ব্যবহারের নিয়ম | কুরআন ও হাদিসের দলিল

ইসলামে সুদের হুকুম কি? সুদ কি হারাম? জানুন কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে সুদের ভয়াবহতা এবং ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদের টাকা থেকে পরিত্রাণের উপায় ও ব্যয়ের খাত স

প্রশ্ন: ইসলামে সুদের হুকুম কি? সুদভিত্তিক ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদের টাকা কোন খাতে ব্যয় করা উচিত?


উত্তর:

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য। শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। অতঃপর:

প্রথমত: কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমার আলোকে সুদের হুকুম

কুরআন সুন্নাহ এবং এই উম্মতের ইজমা তথা সর্বসম্মতিক্রমে সুদ হারাম। সুদ খাওয়া মারাত্মক অপরাধ। এ জন্যই তো আল্লাহ্ তা‘আলা সুদখোরের সাথে যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। যা অন্য কোন পাপীর সাথে দেননি। আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ الرِّبَا أَضْعَافاً مُّضَاعَفَةً وَاتَّقُواْ اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ- ‘হে মুমিনগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে সূদ খেয়ো না। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। তাতে তোমরা অবশ্যই সফলকাম হবে’

(আলে ইমরান ৩/১৩০)

তিনি আরো বলেন,

«يَآ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَذَرُوْا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِيْنَ، فَإِنْ لَمْ تَفْعَلُوْا فَأْذَنُوْا بِحَرْبٍ مِّنَ اللهِ وَرَسُوْلِهِ "হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করো এবং সুদের যা অবশিষ্ট রয়েছে তা বর্জন করো যদি তোমরা মু’মিন হওয়ার দাবি করে থাকো। আর যদি তোমরা তা না করো তাহলে আল্লাহ্ তা‘আলা ও তদীয় রাসূলের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও’’।

(বাক্বারাহ্ : ২৭৮-২৭৯)

সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, জাবের রা. হতে বর্ণিত,

أنه لعن آكل الربا وموكله وكاتبه وشاهديه، وقال: هم سواء “সুদ গ্রহীতা, সুদ দাতা, সুদের লেখক এবং স্বাক্ষীদ্বয়কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিশম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, তারা সকলেই সমান (গুনাহগার)।”

(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৯৫)

শাফি‘ঈ মাযহাবের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, ইমাম মুহিউদ্দীন বিন শারফ আন-নববী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৬৭৬ হি.] বলেছেন:

“সুদী কারবারকারী দুই পক্ষের চুক্তি লিপিবদ্ধ করা ও দুই পক্ষের সাক্ষী হওয়া হারাম— এ ব্যাপারে এ হাদিস সুস্পষ্ট। এ হাদিসে বাতিল কাজে সহযোগিতা করা হারাম হওয়ার দলিলও রয়েছে।”

(নববী শারহু মুসলিম;খণ্ড;১১;পৃষ্ঠা;২৬থেকে সমাপ্ত)

সৌদি ফতোয়া বোর্ড এবং সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য, যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ, ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.]- কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল "ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদের বৈধতা নিয়ে আলেমদের মধ্যে বিভিন্ন মত রয়েছে। এই বিষয়ে আপনার পরিস্কার দৃষ্টিভঙ্গি জানতে চাই।"

জবাবে শাইখ বলেন:

أخذ الفوائد البنكية الربوية حرام بلا شك لأنها ربا صريح والله سبحانه حرم الربا وحرمه رسوله صلى الله عليه وسلم، وأجمع المسلمون على تحريم الربا، ومن استحله فهو كافر. ومن الربا الفوائد البنكية ومن قال بحلها فلا عبرة بقوله لأنه مخالف للنصوص. ثم ما كل مفتٍ يكون على مستوى الفتوى فبعض المفتين اليوم جهال بالأحكام الشرعية أو متساهلون بشأن الفتوى وخطورتها

"সুদভিত্তিক ব্যাংক থেকে যে মুনাফা পাওয়া যায়, তা গ্রহণ করা নিঃসন্দেহে হারাম। কারণ এটি সুস্পষ্ট রিবা (সুদ)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা রিবাকে হারাম ঘোষণা করেছেন, তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ও তা হারাম করেছেন, এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহ ঐক্যমতের ভিত্তিতে রিবাকে হারাম মনে করেন। অতএব, কেউ যদি রিবাকে হালাল মনে করে, তাহলে সে ইসলামের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে কাফির হয়ে যায়। ব্যাংক থেকে অর্জিত সুদও এই রিবার অন্তর্ভুক্ত। কেউ যদি বলে এটি হালাল, তার এ কথার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই; কারণ তা স্পষ্টভাবে কুরআন ও সুন্নাহর বিরোধিতা করে।এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—সব মুফতী যে সত্যিকার অর্থে যোগ্য ও অভিজ্ঞ হন, তা নয়। বরং এই যুগে অনেকেই রয়েছেন যারা শরীয়তের বিধান-বিধির বিষয়ে অজ্ঞ, কিংবা তারা ফতোয়া প্রদানে খুবই শৈথিল্য অবলম্বন করেন; অথচ ফতোয়া দেওয়া অত্যন্ত গুরুতর ও দায়িত্বপূর্ণ কাজ।"

(https://ar.islamway.net/fatwa/9770)

দ্বিতীয়ত: সুদভিত্তিক ব্যাংকে অর্থ জমা রাখা ও সুদের অর্থ ব্যয়ের বিধান

সুদ ইসলামে স্পষ্টভাবে হারাম ও মারাত্মক বড় গুনাহ গুলোর হওয়ায় জেনে-বুঝে কোনো সুদী ব্যাংকে অর্থ জমা রাখা কিংবা তাদের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনে জড়ানো শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। তবে যদি বাস্তব জীবনে একান্ত বাধ্যতামূলক পরিস্থিতির কারণে সুদী ব্যাংকে অর্থ রাখার প্রয়োজন হয়, তাহলে কেবল কারেন্ট (চলতি) একাউন্ট ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে—যেখানে কোনো ধরনের সুদ দেওয়া বা গ্রহণ করা হয় না।অন্যদিকে, সুদী ব্যাংকের সঞ্চয়ী একাউন্টে অর্থ জমা রাখা কখনোই জায়েয নয়—এমনকি যদি কেউ সুদ গ্রহণ না করে তবুও। কারণ সঞ্চয়ী একাউন্টে টাকা রাখা অর্থাৎ ব্যাংককে সুদভিত্তিক ঋণ দেওয়া, যা শরিয়তসম্মত নয়। কারেন্ট একাউন্টে জমা রাখার ক্ষেত্রে এমন ঋণ চুক্তি হয় না; যদিও এটি ব্যাংককে সহযোগিতা করার শামিল, তবুও এতে সরাসরি কোনো সুদী চুক্তিতে লিপ্ত হওয়া হয় না। তবে মনে রাখা উচিত, সুদি ব্যাংকে টাকা রাখা মানে এতে সুদ নামক হারাম ও গুরুতর গুনাহের কাজে পরোক্ষভাবে সহায়তা করা।অথচ মহান আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন:

"তোমরা পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অপরকে সহায়তা করো না।"

(সূরা আল-মায়িদাহ, আয়াত:২)

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু কাসীর (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন ব্যক্তিদেরকে ভালো কাজে সহযোগিতা করতে আদেশ করেছেন এবং অন্যায়, অসৎ ও হারাম কাজে সাহায্য-সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন"।

(তাফসীর ইবনে কাসীর,খণ্ড;২;পৃষ্ঠা;১২;তাফসীরে কুরতুবী,খণ্ড;৬;পৃষ্ঠা;৪৬-৪৭)

সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন:

لا يجوز إيداع النقود ونحوها في البنوك الربوية ونحوها من المصارف والمؤسسات الربوية، سواء كان إيداعها بفوائد أو بدون فوائد؛ لما في ذلك من التعاون على الإثم والعدوان، وقد قال تعالى: (ولا تعاونوا على الإثم والعدوان)، إلا إذا خيف عليها من الضياع، بسرقة أو غصب أو نحوهما، ولم يجد طريقا لحفظها إلا إيداعها في بنوك ربوية مثلا، فيرخص له في إيداعها في البنوك ونحوها من المصارف الربوية بدون فوائد محافظة عليها؛ لما في ذلك من ارتكاب أخف المحظورين

"মুদ্রা ও এ জাতীয় অন্য কিছু সুদী ব্যাংকে, সুদী প্রতিষ্ঠানে জমা রাখা জায়েয নাই। সে জমা রাখাটা সুদভিত্তিক হোক কিংবা সুদ ছাড়া হোক। যেহেতু এর মধ্যে গুনাহ ও সীমা লঙ্ঘনের কাজে সহযোগিতা পাওয়া যায়। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: "তোমরা পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করো না"। তবে যদি চুরি হয়ে যাওয়া, ছিনতাই হয়ে যাওয়া বা এমন অন্য কিছুর মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়ার আশংকা করে সেক্ষেত্রে অর্থ সংরক্ষণার্থে সুদমুক্তভাবে সুদী ব্যাংকে বা সুদী প্রতিষ্ঠানে জমা রাখার অবকাশ দেওয়া হবে। যেহেতু এর মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত ছোট গুনাহতে লিপ্ত হওয়া হবে।"

(ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; খণ্ড:১৩; পৃষ্ঠা:৩৪৬)

সুতরাং অজ্ঞতা বশত:বা নিরুপায় হয়ে সুদি ব্যাংকে টাকা রাখা হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয় সেখান থেকে সরে আসতে হবে। আর সেখান থেকে প্রাপ্ত সুদ উত্তোলন করে, বিনিময়ে কোনো সওয়াবের আশা না রেখে, সমাজের কল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করে দিতে হবে। যেমন—গরীব-দুঃস্থদের সাহায্য, জরুরি সামাজিক প্রয়োজনে ব্যয় ইত্যাদি।তবে এটি মনে রাখতে হবে, এভাবে অর্থ ব্যয় করলেও ব্যক্তি সুদের গুনাহ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হতে পারবেন না। বরং এ গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করাই একমাত্র পথ। পাশাপাশি এ-ও জানা জরুরি, সুদের টাকা ব্যাংকে রেখে দেওয়া উচিত নয়। কারণ এতে আশঙ্কা থাকে যে, ব্যাংক ওই অর্থকে আরও হারাম লেনদেনে ব্যবহার করতে পারে। অতএব, এর থেকে দ্রুত মুক্তি নেওয়া এবং তা সঠিকভাবে সমাজের কল্যাণে ব্যয় করা জরুরি—আশা করা যায়, এতে অন্তত নিজেকে হারাম ভোগ থেকে বাঁচানো সম্ভব হবে,ইনশাআল্লাহ।

সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:আমার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ একটি ব্যাংকে জমা আছে, এবং ব্যাংকটি আমাকে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করে। আমি আপনাদের পূর্ববর্তী ফাতওয়া থেকে জেনেছি, এটি স্পষ্টভাবে রিবা (সুদ)। এখন আমি জানতে চাই, এই সুদের অর্থ দিয়ে আমি কী করবো? অনুগ্রহ করে আমাদেরকে রিবার শরঈ হুকুম স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করুন।

উত্তরে (স্থায়ী ফতোয়া কমিটির আলেমগন বলেছেন:

ما أخذته من الفوائد قبل العلم بتحريمها فنرجو أن يعفو الله عنك في ذلك ، وأما ما بعد العلم فالواجب عليك التخلص منه وإنفاقه في وجوه البر : كالصدقة على الفقراء والمجاهدين في سبيل الله مع التوبة إلى الله سبحانه من المعاملة بالربا بعد العلم ؛ لقول الله سبحانه : ( وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَنْ جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِنْ رَبِّهِ فَانْتَهَى فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ) البقرة /275

"আপনি যদি সুদের অর্থ এমন সময় গ্রহণ করে থাকেন, যখন এর হারাম হওয়ার বিধান আপনার অজানা ছিল, তাহলে আমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশাবাদী যে, তিনি আপনাকে এ ব্যাপারে ক্ষমা করবেন। কিন্তু যদি আপনি জেনে-বুঝেই সুদের অর্থ গ্রহণ করে থাকেন, তাহলে আপনার জন্য আবশ্যক হলো—এই (সুদের) অর্থ থেকে নিজেকে মুক্ত করা এবং তা এমন কাজে ব্যয় করে দেওয়া, যা কল্যাণকর ও মানবসেবামূলক, যেমন: দরিদ্র ও অভাবীদের মাঝে বিতরণ করা, কিংবা আল্লাহর পথে জিহাদরতদের সহযোগিতা করা। এর পাশাপাশি, আপনার জন্য অপরিহার্য হলো—আন্তরিকভাবে আল্লাহর দরবারে তাওবা করা এবং ভবিষ্যতে সুদভিত্তিক লেনদেন থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকা, কেননা আপনি এখন জেনে গেছেন যে এটি হারাম। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:"আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন। সুতরাং যার কাছে তার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে তা গ্রহণ করে বিরত হয়েছে—তাহলে পূর্বে যা ঘটে গেছে, তা তার জন্যই। তার হিসাব আল্লাহর ওপর। কিন্তু যারা পুনরায় সুদে জড়িয়ে পড়ে, তারা জাহান্নামবাসী—সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।"

(সূরা বাকারা,আয়াত;২৭৫; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমা;খণ্ড;১৩; পৃষ্ঠা;৩৫২)

বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন:

أما ما أعطاك البنك من الربح : فلا ترده على البنك ولا تأكله ، بل اصرفه في وجوه البر كالصدقة على الفقراء ، وإصلاح دورات المياه ، ومساعدة الغرماء العاجزين عن قضاء ديونهم

“ব্যাংক তোমাকে যে সুদের অর্থ দিয়েছে—তুমি তা ব্যাংকে ফিরিয়ে দেবে না, আর নিজেও তা ভোগ করবে না; বরং তা সৎ পথে ব্যয় করবে, যেমন: গরিব-দুস্থদের সদকা দেওয়া, টয়লেট/ওজুখানা সংস্কার করা, কিংবা এমন ঋণগ্রস্তদের সাহায্য করা, যারা তাদের দেনা পরিশোধে অক্ষম।”

(ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ,খণ্ড ২,পৃষ্ঠা ৪০৭)

(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)


জুয়েল মাহমুদ সালাফি

#Jewelmahmudsalafi

সুদ সম্পর্কিত সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

প্রশ্ন: ইসলামে সুদের হুকুম কী?

উত্তর: কুরআন, সুন্নাহ এবং উম্মতের সর্বসম্মত মত (ইজমা) অনুযায়ী সুদ বা রিবা সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং একটি মারাত্মক কবিরা গুনাহ। আল্লাহ তা'আলা সুদখোরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন, যা অন্য কোনো পাপের ক্ষেত্রে করেননি।

প্রশ্ন: নিরুপায় হয়ে সুদী ব্যাংকে টাকা রাখলে করণীয় কী?

উত্তর: একান্ত প্রয়োজনে নিরাপত্তা বা লেনদেনের জন্য শুধুমাত্র সুদবিহীন কারেন্ট একাউন্ট ব্যবহার করার অনুমতি রয়েছে। তবে সুদভিত্তিক সঞ্চয়ী (Savings) একাউন্ট রাখা জায়েয নয়, কারণ এটি সরাসরি হারাম চুক্তির অন্তর্ভুক্ত এবং গুনাহের কাজে সহযোগিতার শামিল।

প্রশ্ন: ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদের টাকা দিয়ে কী করব?

উত্তর: এই টাকা নিজে ভোগ করা যাবে না, ব্যাংকেও ফেরত দেওয়া উচিত নয়। সওয়াবের কোনো রকম আশা না করে এই হারাম অর্থ থেকে পরিত্রাণের নিয়তে তা গরীব-দুস্থ, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি বা সমাজের কল্যাণমূলক কাজে (যেমন: পাবলিক টয়লেট নির্মাণ) ব্যয় করে দিতে হবে।

প্রশ্ন: সুদের টাকা দান করলে কি গুনাহ মাফ হয়ে যাবে?

উত্তর: না, শুধুমাত্র টাকা বিলিয়ে দিলেই এই মারাত্মক গুনাহ মাফ হয় না। এটি হারাম অর্থ থেকে নিজেকে মুক্ত করার একটি উপায় মাত্র। এই গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে তওবা করা আবশ্যক এবং ভবিষ্যতে এমন লেনদেন থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকার দৃঢ় সংকল্প করতে হবে।

Related Posts
পাঠকের মন্তব্য

আপনার মতামত কমেন্টে জানান! আপনি চাইলে আমাদের যোগাযোগ ফর্ম এ লিখতে পারেন।

Post a Comment

আপনার কমেন্ট রিভিউ করে দেখা হবে! প্রয়োজনে SalafiArchive কর্তৃপক্ষ আপনার কমেন্ট রিমুভ করার অধিকার রাখে।

Join the conversation

Disqus shortname is missing. Consider reporting about this message to the admin of this blog. It seems you are the admin of this blog, add disqus shortname through Theme HTML editor to enable Disqus comments.

Join the conversation