সত্য ও মিথ্যার সহাবস্থান: ইমাম আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর সতর্কবাণী
প্রখ্যাত তাবি‘ তাবি‘ঈ, শাইখুল ইসলাম, ইমাম আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৫৭ হি.]-কে বলা হলো:
أنا أُجالِس أهل السُنَّة، وأجالس أهل البدع!
“এক ব্যক্তি বলে, আমি আহলুস সুন্নাহদের সঙ্গে বসি, আবার আহলুল বিদআতদের সঙ্গেও বসি।”
এ কথা শুনে ইমাম আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন:
هذا رجلٌ يريد أن يُساوي بين الحق والباطل
“এই ব্যক্তি চায় হক এবং বাতিলকে সমান করে দিতে।" (অর্থাৎ সত্য এবং মিথ্যাকে সমান মর্যাদা দিতে চায়)
(ইবনু বাত্তাহ, আল-ইবানা আল-কুবরা; খণ্ড; ২; পৃষ্ঠা; ৪৫৬)
ইমামের উক্তির তাৎপর্য ও শিক্ষা
ইমাম আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর এই উক্তির মূল মর্ম ও শিক্ষাটি অত্যন্ত গভীর এবং গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে আকীদাহ ও মানহাজ সংক্রান্ত বিষয়ে। যেমন ইমামের উক্তি: “এই ব্যক্তি চায় হক ও বাতিলকে সমান করে দিতে।” অর্থাৎ ইমাম আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) এই বক্তব্যের মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন যে, কেউ যদি আহলুস সুন্নাহ ও আহলুল বিদআত—উভয়ের সাথেই সমানভাবে সম্পর্ক বজায় রাখে, তাদের মাঝে কোন পার্থক্য না করে, তবে সে আসলে হকের মর্যাদা খর্ব করে এবং বাতিলকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করে। এটি একটি বিপজ্জনক মানহাজ, যা সত্য ও মিথ্যার মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
ইমাম আওযা‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ)-এর বক্তব্য থেকে আরও যা স্পষ্ট হয়:
(১) হক ও বাতিল কখনো এক হতে পারে না:
অর্থাৎ “হক ও বাতিল কখনো একত্র হতে পারে না, যেমন: বিশুদ্ধতা ও অপবিত্রতা, আলো ও অন্ধকার, একসাথে টিকতে পারে না। সত্য ও মিথ্যার মাঝে স্পষ্ট পার্থক্য রাখা অপরিহার্য, কারণ উভয়কে এক চোখে দেখলে বা নিরপেক্ষতা দেখালে তখন সত্যের সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে এবং মানুষ বিভ্রান্তির অন্ধকারে হকের পথ হারায়।"
(২) বিপথগামীদের গোমরাহির প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শন:
অর্থাৎ বিপথগামীদের পাপাচার ও গোমরাহির প্রতি সহানুভূতি বা নমনীয়তা প্রদর্শন অত্যন্ত বিপজ্জনক। কেননা তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বা সহাবস্থান সমাজে একটি ভুল বার্তা পৌঁছে দিতে পারে—যে তাদের (বিদআতিদের) পথও গ্রহণযোগ্য। এর ফলে সমাজে বিদআত ও ভ্রান্ত আকীদাহ সহজেই ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা ঈমান-আক্বীদা ও সহীহ দ্বীনি বোধকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সক্ষম।”
(৩) এতে করে সত্যের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়:
অর্থাৎ, সত্যের প্রকৃত মর্যাদা তখনই অক্ষুণ্ণ থাকে, যখন আমরা দৃঢ়ভাবে হকের অনুসরণ করি। হক মানে শুধু সঠিক পথ গ্রহণ করা নয়; বরং হকপন্থীদের সঙ্গে সম্প্রীতি বজায় রাখা এবং যারা দ্বীনের নামে ভ্রান্ত ধারণা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে, তাদের থেকে সচেতনভাবে বিরত থাকাও হকের অনুগত্যের অংশ। সুতরাং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নাসীহা (উপদেশ), যেখানে হকপন্থী ও বাতিলপন্থীদের মাঝে স্পষ্ট ফারাক রাখার নির্দেশনা রয়েছে।
(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।
SalafiArchive