আরশের ছায়া দ্বারা উদ্দেশ্য কী? বিশুদ্ধ আকিদার ব্যাখ্যা
প্রশ্ন: আরশের ছায়া দ্বারা উদ্দেশ্য কী? হাদীসে এসেছে, "সেই দিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া কোন ছায়া থাকবেনা" - এই মাসালায় বিশুদ্ধ আক্বীদা কি হবে?
উত্তর: আরশের ছায়া দ্বারা উদেশ্য কি? এই মাসআলার সারসংক্ষেপ হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাদীসে এসেছে— "সেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না।"
এখানে "الظِلُّ" (ছায়া) শব্দটির অর্থ নিয়ে আলেমগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। জমহুর (অধিকাংশ) আলেমের মত অনুযায়ী, এখানে আল্লাহর ছায়া বলতে উদ্দেশ্য আল্লাহর আরশের ছায়া। বিভিন্ন হাদীসে এই শব্দটি সাধারণভাবে (মুতলাক) ব্যবহৃত হলেও, তা অন্য হাদীসের প্রেক্ষিতে নির্দিষ্ট (মুকাইয়্যাদ) করা হয়েছে। প্রত্যেক হাদীসেই "যিল্লুন" (ছায়া) শব্দটি আল্লাহর প্রতি সম্পৃক্ত করা হয়েছে, অর্থাৎ বলা হয়েছে "আল্লাহর ছায়া", যার দ্বারা বোঝানো হয়েছে সেই হাদীসকে যেখানে আরশের ছায়া স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।
সুতরাং হাদীসে বর্ণিত "يُظِلُّهُمُ اللهُ فِيْ ظِلِّهِ"—"আল্লাহ তাঁদেরকে তাঁর ছায়ায় আশ্রয় দেবেন" — এ বাক্যে আল্লাহর ছায়া বলতে বোঝানো হয়েছে তাঁর আরশের ছায়া। আর এর সমর্থনে এমন একটি রেওয়ায়েত পাওয়া যায় যেখানে স্পষ্টভাবে আরশ শব্দটির উল্লেখ আছে যেমন:
……..আর আমার ভালোবাসা তাদের জন্য নিশ্চিত, যারা একে অপরকে আমার জন্য ভালোবাসে এবং যারা একে অপরকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসে, তারা কিয়ামতের দিন আরশের ছায়ায় নূরের মিম্বরে থাকবে, যেদিন আমার ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না।" (মুসনাদে আহমাদ হা/২২১১৭)।
আরশের ছায়া দ্বারা উদ্দেশ্য কি?
এ বিষয়ে আমাদের ইমাম সর্বোচ্চ 'উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ, মুহাদ্দিস, মুফাসসির ও উসূলবিদ, আশ-শাইখুল 'আল্লামাহ, ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন:
" قوله : ( لا ظل إلا ظله ) يعني : إلا الظل الذي يخلقه ، وليس كما توهم بعض الناس أنه ظل ذات الرب عز وجل ، فإن هذا باطل ؛ لأنه يستلزم أن تكون الشمس حينئذ فوق الله عز وجل "
"হাদীসের এই বাক্য: 'لا ظل إلا ظله' (আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না) — এর অর্থ হলো: ওই ছায়া যে ছায়া আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন।মানুষেরা ধারণা করে যে এই ছায়াটি হলো আল্লাহ তাআলার সত্ত্বার ছায়া কিন্তু এমন ধারণা বাতিল ও ভ্রান্ত। কেননা,এর দ্বারা এটা আবশ্যক হয়ে যায় যে, সূর্য আল্লাহ তায়ালার উপরে রয়েছে"। (ইবনু উসাইমীন;মাজমুউ ফাতাওয়া,খন্ড: ৮ পৃষ্ঠা:৪৯৭) (আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)