শাইখ বিন বায: অনন্য এক জীবন
একজন ইয়েমেনি ভাই, যিনি শাইখ ইবনে বায [রহিমাহুল্লাহ]-এর একজন ছাত্র ছিলেন, তিনি বলেন:
আমি শাইখ ইবনে বাযের ক্লাসে নিয়মিত অংশ নিতাম, তখন আমি চরম দারিদ্র্য ও অভাব-অনটনের মধ্যে ছিলাম। দুনিয়ার তেমন কোনো বস্তুই আমার ছিলো না।
একদিন আমি শাইখকে খুশি করতে চাইলাম, তাই বললাম: আজ আমি শাইখকে রাতের খাবারের দাওয়াত দিবো। আমি নিশ্চিত ছিলাম, শাইখ তা প্রত্যাখ্যান করবেন, কারণ তাঁর অনেক ব্যস্ততা ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থাকে।
তাই মাগরিবের ক্লাস শেষে আমি বললাম: "হে শাইখ! আজ আপনি আমার সঙ্গে আমার বাড়িতে রাতের খাবার খাবেন?"
তখন শাইখ বললেন: "অবশ্যই! [আশ্বস্ত হও, আমি আসবো]" — অর্থাৎ তিনি আমার দাওয়াত গ্রহণ করলেন।
তিনি বলেন: তখন আমি লজ্জায় পড়ে গেলাম, কেননা আমি শাইখকে দাওয়াত দিয়ে নিজেই বিপদে পড়েছি! আমার তো শাইখকে খাওয়ানোর মতো তেমন কিছুই নেই!
তখন শাইখ বললেন: "তবে আমার দুইটি শর্ত আছে।"
প্রথম শর্ত: "তুমি কোনো কষ্ট বা বাড়তি খরচ করবে না।"
আমি মনে মনে বললাম: আমার কাছে এমন কিছুই নেই, যা দিয়ে কষ্ট করে খরচ করবো!
দ্বিতীয় শর্ত: "তুমি এখনই আমার সঙ্গে চলো, আমি একটি সাক্ষাতে যাচ্ছি, তারপর তোমার বাসায় যাবো।"
আমি রাজি হয়ে গেলাম। আমরা গাড়িতে রওনা হলাম। চালক গাড়ি চালাচ্ছিল, আমি শাইখের পাশে বসে ছিলাম।
দেখি, নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রাসাদ... রাস্তা ফাঁকা করে দেওয়া হচ্ছে শাইখের জন্য। আমরা এক প্রাসাদে পৌঁছালাম—এটা ছিল বাদশাহ ফাহদের প্রাসাদ।
আমরা ভিতরে প্রবেশ করলাম। দেখি, বাদশাহপুত্ররা ও বাদশাহ সবাই শাইখের জন্য অপেক্ষা করছেন। শাইখ এশার নামাজের পর তাদের জন্য একটি ক্লাস নিতেন। এবং বাদশাহ তার পুত্রদের বাধ্য করতেন এই ক্লাসে উপস্থিত হতে।
শাইখ ক্লাস নিলেন, বাদশাহ ও তার পুত্ররা অত্যন্ত সম্মানের সঙ্গে বসে শুনলেন। এরপর শাইখ যখন বের হয়ে যেতে চাইলেন, তখন তারা বললো: "না, হে শাইখ! রাতের খাবার তো প্রস্তুত।"
তখন একটি বিশাল খাবারের টেবিল সাজানো হলো—বিভিন্ন রকমের খাবারে পূর্ণ, যেগুলোর অনেক কিছু আমি আগে কখনো দেখিওনি! আমি খুব খুশি হলাম, ভাবলাম হয়তো শাইখ খেয়ে যাবেন, আমিও খাবো!
কিন্তু শাইখ বললেন: "আজ রাতে আমি একটি দাওয়াত পেয়েছি"। তারা বারবার অনুরোধ করলো,কিন্তু তিনি বারবার অস্বীকার করলেন।
অবশেষে একজন বললো: "আপনি কার দাওয়াত পেয়েছেন? আমরা তার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আসি, হে শাইখ!"
আমি ভাবলাম আমি বলে দেই: "আমার কাছে দাওয়াত পেয়েছেন" — যেন তারা অনুমতি দেয়! কিন্তু শাইখ কিছুতেই বলেন না এবং অনড় থাকেন।
তারা যখন আর কোনো উপায় পেল না, তখন শাইখকে যেতে দিলো। শাইখ আমাকে নিয়ে আমার বাড়িতে এলেন।
আল্লাহর কসম! আমার ঘরে কেবল শুকনো রুটি আর কিছু বেঁচে যাওয়া পনির ছিল। আমি তা-ই শাইখের সামনে পেশ করলাম। তিনি খেয়ে নিলেন, তারপর আমাকে দোআ দিতে লাগলেন ও বললেন: "আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দিন, তুমি ভালো করেছো, সুন্দরভাবে আপ্যায়ন করিয়েছো, খাইয়েছো।"
আমি খুবই আনন্দিত ছিলাম। মনে হচ্ছিল, শাইখ যেন আমাকে বোঝাতে চাচ্ছেন—তাঁর কাছে একজন সাধারণ মানুষের দাওয়াত রাজকীয় প্রাসাদ ও খাবারের চেয়েও সম্মানজনক। বিষয়টা বাদশাহ বা প্রাসাদ নয়, বরং ইখলাস (নিষ্ঠা) ও দীনদারি।
এই ছিল আমাদের শাইখ, আল্লামা ইবন বায [রহিমাহুল্লাহ]-এর চরিত্র। তিনি ছিলেন দুনিয়াবিমুখ, যাহিদ। আল্লাহ তাঁর উপর বিশাল রহমত বর্ষণ করুন, এবং আমাদেরকে ও তাঁকে আল্লাহর নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও সৎকর্মশীলদের দলে জান্নাতে একত্র করুন — আর কতই না উত্তম সঙ্গী তারা!
Frequently Asked Questions
শাইখ ইবনে বায (রহ.) কে ছিলেন?
শাইখ আব্দুল আযীয ইবনে বায (রহ.) ছিলেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একজন বিশিষ্ট ইসলামিক পণ্ডিত। তিনি ২০শ শতাব্দীর অন্যতম প্রভাবশালী সালাফী আলেম হিসেবে পরিচিত।
এই ঘটনা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
এই ঘটনা থেকে আমরা শিখতে পারি: ১) সাধারণ মানুষের সাথে নম্র আচরণের গুরুত্ব, ২) দুনিয়াবিমুখতার প্রকৃত উদাহরণ, ৩) প্রতিশ্রুতি রক্ষার গুরুত্ব, ৪) ইখলাস বা নিষ্ঠার প্রকৃত অর্থ, এবং ৫) ক্ষমতাবানদের চেয়ে দুর্বলদের অধিকার প্রদানের গুরুত্ব।
শাইখ কেন রাজপ্রাসাদের দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করলেন?
শাইখ ইবনে বায (রহ.) একজন দরিদ্র ছাত্রের দাওয়াতকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন কারণ: ১) তিনি ইখলাসের গুরুত্ব বুঝতেন, ২) প্রতিশ্রুতি রক্ষাকে ফরজ মনে করতেন, ৩) দুনিয়ার মর্যাদাকে তুচ্ছ মনে করতেন, এবং ৪) তিনি সাধারণ মানুষের সাথে সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন।
শাইখের এই আচরণ ইসলামে কীভাবে মূল্যায়ন করা হয়?
ইসলামে শাইখের এই আচরণকে অত্যন্ত প্রশংসনীয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি নবীজি (সা.)-এর সুন্নাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যিনি দরিদ্রদের সাথে বসে খেতেন, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতেন এবং দুনিয়ার চাকচিক্যকে তুচ্ছ মনে করতেন।
আমরা কীভাবে শাইখের জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি?
আমরা শাইখের জীবন থেকে নিম্নোক্ত শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি: ১) সরলতা ও নম্রতা অবলম্বন করা, ২) প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা, ৩) দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি পোষণ করা, ৪) জ্ঞান অর্জন ও বিতরণে আত্মনিয়োগ করা, এবং ৫) সমাজের সব স্তরের মানুষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।