ঈমাম আহমাদ বিন হানবাল রহ. এর আকিদাহ (হাম্বলি আকিদাহ) ও বর্তমান সালাফি (আছারী) আকিদাহ কি আলাদা?
আসুন দেখে নিই ইমাম আহমাদ রহ. এর আকিদাহ কি ছিল:-
ঈমান বিষয়ে তাঁর বক্তব্য হলো:
وَالْإِيمَان قَول وَعمل يزِيد وَينْقص كَمَا جَاءَ فِي الْخَبَر (أكمل الْمُؤمنِينَ إِيمَانًا أحْسنهم)
"ঈমান হল কথা ও কাজ – এটি বৃদ্ধি পায় এবং কমে যায়, যেমন হাদীসে এসেছে: 'সবচেয়ে পরিপূর্ণ ঈমান তার, যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম।'"
(দেখুন, উসুলুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা ৩৪)
ইমানে ইস্তিসনা (তথা "আমি মুমিন ইনশাআল্লাহ" বলা) সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য:
سئل عن الاستثناء في الإيمان ما تقول فيه؟ قال: أما أنا فلا أعيبه
তাঁকে (ইমাম আহমাদকে) ঈমানে ইস্তিসনা (ইন শা আল্লাহ বলা) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন:
"আমি তো এতে কোনো দোষ দেখি না।"
(আশ-শারীয়া (২/৬৫৮), আছার নং ২৭৮)
"আমি মুমিন ইনশাআল্লাহ"- বলা মানে- আমি ঈমান এনেছি এবং আমি ঈমানে কোনো সন্দেহ করিনি কিন্তু জানিনা তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে কিনা। এই হিসেবে "আমি মুমিন ইনশাআল্লাহ" বললে কোনো সমস্যা নেই ইমাম আহমাদ রহ. এর মতে। কিন্তু শর্ত হলো, নিজের ঈমানে কেউ যেন সন্দেহ না করে।
কুরআন সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য হলো:
والقرآن كلام الله وليس بمخلوق
"কুরআন আল্লাহর কালাম, এটি সৃষ্ট নয়।"
(দেখুন, উসুলুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা ২২)
এই বক্তব্য দেখে বুঝা গেলো যে, তিনি কালাম সিফাতকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করতেন এবং কুরআনকে মাখলুক বলতেন না।
আল্লাহর সিফাত বিষয়ে তাঁর বক্তব্য:
১. আল্লাহ তা'আলার 'আরশের উপর থাকা নিয়ে তাঁর বক্তব্য:
أبو عبد الله (إمام أحمد بن حنبل رحمه الله)-কে বলা হলো:
والله تعالى فوق السماء السابعة على عرشه بائن من خلقه، وقدرته، وعلمه بكل مكان؟ قال: نعم على عرشه لا يخلو شيء من علمه
“আল্লাহ তা'আলা সপ্তম আকাশের উপরে তাঁর আরশের উপর অবস্থান করছেন, তিনি তাঁর সৃষ্টির থেকে পৃথক, কিন্তু তাঁর কুদরত (ক্ষমতা) ও জ্ঞান সর্বত্র পরিব্যাপ্ত?” তিনি বললেন: “হ্যাঁ, তিনি তাঁর আরশের উপর অবস্থান করছেন এবং তাঁর জ্ঞানের বাইরে কিছুই নেই।”
(দেখুন: الإبانة الكبرى - ابن بطة, আছার নং ১১৫)
২. অন্যান্য সিফাত সংক্রান্ত হাদীস প্রসঙ্গে:
ইমাম আহমাদ ও ইমাম ইসহাক ইবনু রাহওয়াহ কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:
ليلة حين يبقى ثلث الليل الأخير إلى سماء الدنيا... إلخ
তারা বললেন: “এই সবকিছুই সহীহ।”
(দেখুন: মাসঈল, ইসহাক ইবনু মানসুর, মাসাঈল নং ৩৩৩২)
এই বক্তব্যে ইমাম আহমাদ রহ. আল্লাহর নুযুল অর্থ্যাৎ অবতরণ সিফাত, পা সিফাত ও সুরত (রুপ) সিফাতকে বাহ্যিক অর্থে গ্রহণ করেছেন।
[নোট] এখানে একটা বিষয় বলি, আদমকে আল্লাহর সুরতে সৃষ্টি মানে এমন নয় যে, হুবহু তাঁর অনুরুপ বা সাদৃশ্য; কারণ আল্লাহ তা'আলা তুলনাহীন সত্তা। এখানে উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহর হাত, পা, চেহারা, সুরত, শ্রবণ, দর্শন, কথা ইত্যাদি সিফাত আছে। আবার মানুষকেও তিনি এসকল সিফাতের অধিকারী করেছেন। তবে উভয়ের ধরন আলাদা।
(তাঁর বিস্তারিত মৌলিক আকিদাহ দেখুন তাঁর নিজের লিখিত উসুলুস সুন্নাহ কিতাবে)
আমি বলি: আমাদের আকিদাহ এর সাথে ইমাম আহমাদ রহ. এর আকিদার কোনো পার্থক্য নেই। আমার আকিদাই হলো হাম্বলি আকিদাহ।
ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বাল রহ. এর মতে ঈমান কী?
ঈমান হল কথা ও কাজ – এটি বৃদ্ধি পায় এবং কমে যায়। যেমন হাদীসে এসেছে: "সবচেয়ে পরিপূর্ণ ঈমান তার, যার চরিত্র সবচেয়ে উত্তম।" (উসুলুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা ৩৪)
"আমি মুমিন ইনশাআল্লাহ" বলা কি ইমাম আহমাদ রহ. এর দৃষ্টিতে ঠিক?
হ্যাঁ, তিনি বলেছেন: "আমি তো এতে কোনো দোষ দেখি না।" এর মানে, নিজের ঈমানে কেউ যেন সন্দেহ না করে—তবে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিনয় দেখানো যায়।
ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বালের মতে কুরআন কি সৃষ্ট?
না, তিনি বলেছেন: "কুরআন আল্লাহর কালাম, এটি সৃষ্ট নয়।" (উসুলুস সুন্নাহ, পৃষ্ঠা ২২)
ইমাম আহমাদ রহ. আল্লাহর আরশে থাকার ব্যাপারে কী বলেছেন?
তিনি বলেছেন: “আল্লাহ তা'আলা সপ্তম আকাশের উপর আরশে অবস্থান করছেন, সৃষ্টির থেকে পৃথক। কিন্তু তাঁর জ্ঞান ও কুদরত সর্বত্র।” (الإبانة الكبرى, আছার ১১৫)
ইমাম আহমাদ রহ. হাদীসসমূহে বর্ণিত সিফাত বিষয়ক বক্তব্যগুলোর ব্যাপারে কী মত পোষণ করেছেন?
তিনি বলেছেন: “এই সবকিছুই সহীহ।” যেমন: আল্লাহর অবতরণ, জান্নাতীরা আল্লাহকে দেখবে, আল্লাহ আদমকে তাঁর সুরতে সৃষ্টি করেছেন ইত্যাদি।